চীনের অর্থনীতিতে কী ঘটছে, তরুণেরা কেন হতাশ

চীনের অর্থনীতিতে কী ঘটছে, তরুণেরা কেন হতাশ

চীনের সরকারি চাকরির পরীক্ষার আগের রাতে মেলোডি ঝ্যাং ছাত্রীনিবাসের করিডরে উদ্বেগের সঙ্গে পায়চারি করছিলেন আর বিড়বিড় করে প্রশ্নের উত্তর আওড়াচ্ছিলেন। ঘরে ঢোকার পরই কেবল তিনি বুঝতে পারেন, এতক্ষণ তিনি আসলে কাঁদছিলেন।

চীনের মিডিয়া শিল্পে এ পর্যন্ত শতাধিক আবেদন করেও চাকরি জোটাতে পারেননি ঝ্যাং। এখন তিনি রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমে চাকরি পাওয়ার জন্য উঠেপড়ে লেগেছেন। সব মিলিয়ে ৩৯ হাজার ৬০০ সরকারি পদের জন্য রেকর্ড ২৬ লাখ পরীক্ষার্থী আবেদন করেছেন। দেশটির তরুণদের বেকারত্ব কোন পর্যায়ে উঠেছে, সরকারি চাকরিতে আবেদনের এই চিত্র দেখলে তা বোঝা যায়।

ঝ্যাং চীনের অন্যতম শীর্ষ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রেনমিন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক করেছেন। কিন্তু তারপরও চাকরি জোটাতে পারছেন না ২৪ বছর বয়সী এই তরুণী। রয়টার্সকে তিনি বলেন, ‘আমরা ভুল সময়ে জন্মগ্রহণ করেছি। কেউ আমাদের আশা-আকাঙ্ক্ষা নিয়ে ভাবে না, অর্থনীতির এই ধীরগতির মধ্যে এভাবে একের পর এক চাকরি খুঁজে যাওয়া অত্যাচারের শামিল।’

ভালো যাচ্ছে না চীনের অর্থনীতি, একধরনের আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি তৈরি হয়েছে। সে কারণে বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগে উৎসাহিত হচ্ছেন না, ভোক্তারাও ব্যয় করতে চাইছেন না। এতে দীর্ঘ মেয়াদে চীনের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা নষ্ট হতে পারে।

সরকারি পরিসংখ্যানে চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কম হয়নি। ২০২৩ সালে দেশটির প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে ৫ দশমিক ২ শতাংশ। আগের বছর অর্থাৎ, ২০২২ সালেও ৫ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছিল। কিন্তু দেশটির জিডিপির ৩০ শতাংশের জোগানদাতা আবাসন খাতের অবস্থা খুবই করুণ। ফ্ল্যাট বিক্রি কমে যাওয়ার পাশাপাশি দামও কমে গেছে। এতে মালিকদের আয় কমে গেছে, শ্রমিকেরাও আগের বছরের চেয়ে কম আয় করছেন। এসব কারণে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিতে সংকোচনের আভাস পাওয়া যাচ্ছে।

চীন পরিসংখ্যানের দিক থেকে মন্দার কবলে পড়েনি, বরং অনেক ভালো অবস্থায় আছে। পরপর দুটি প্রান্তিকে অর্থনৈতিক সংকোচন হলে বলা হয় যে মন্দা শুরু হয়েছে। কিন্তু সাংহাইয়ের চায়না ইউরোপ ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস স্কুলের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ঝু তিয়ান রয়টার্সকে বলেন, এই নীতি উন্নয়নশীল দেশের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হওয়া উচিত নয়। কারণ, চীনের জিডিপির ৪০ শতাংশ বিনিয়োগ হয়, যে হার যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় দ্বিগুণ।

ঝু বলেন, ‘আমরা মন্দার কবলে পড়েছি। ১০ জন মানুষের সঙ্গে কথা বললে ৭ জনই বলবেন, গত বছরটা খারাপ গেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমার মনে হয় না, সরকার এটা নিতে পারবে। বিষয়টি চিরকাল এভাবে চলতে পারে না।’ এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে আরও প্রণোদনার পরামর্শ দেন তিনি।

গত জুন মাসে চীনের ১৬ থেকে ২৪ বছর বয়সী প্রতি ৪ জনের মধ্যে ১ জন বা প্রায় ১০ কোটি মানুষ বেকার ছিল। পরিস্থিতি এতই সঙিন যে এর পর থেকে চীন সরকার বেকারত্বের পরিসংখ্যান প্রকাশই বন্ধ করে দেয়। এরপর গত মাসে আবার কলেজছাত্রদের হিসাব থেকে বাদ দিয়ে নতুন পরিসংখ্যান প্রকাশ করে চীন, তখন বেকারত্বের হার ছিল ১৪ দশমিক ৯ শতাংশ। যাঁদের জন্ম ১৯৯৭ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে, অর্থাৎ যাঁদের জেন জি বলে সম্বোধন করা হয়, তাঁদের মধ্যে হতাশা সবচেয়ে বেশি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *