ইভ্যালি কি পারবে গ্রাহকদের শত শত কোটি টাকা ফেরত দিতে?

ইভ্যালি কি পারবে গ্রাহকদের শত শত কোটি টাকা ফেরত দিতে?

গ্রাহকদের কাছে প্রতিষ্ঠানটির দেনা ৩১১ কোটি টাকা

মার্চেন্টদের কাছে দেনা ২০৫ কোটি টাকা

 

২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠার পরেই অনলাইন কেনাকাটার ক্ষেত্রে বাংলাদেশে সাড়া জাগিয়েছিল ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালি। সব ধরনের পণ্যে ব্যাপক ছাড় এবং লোভনীয় ক্যাশব্যাক অফারের পাশাপাশি তারকাদের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর করা, টিভি চ্যানেল-সহ সব গণমাধ্যমে দর্শনীয় বিজ্ঞাপন দিয়ে ব্যাপকভাবে আলোচনায় আসে প্রতিষ্ঠানটি। মাত্র তিন বছরে এর গ্রাহক সংখ্যা ৪০ লাখ ছাড়িয়ে গিয়েছিল।

 

তবে অনেকের অভিযোগ ছিল, যে অগ্রিম ১০% টাকা দিয়ে পণ্যের অর্ডার দেওয়ার পর পণ্য পেতে কয়েক মাসও সময় লেগেছে। আবার অনেকে শেষ দিকে অর্ডার দিয়ে পণ্যও পাননি। এমনকি ইভ্যালি যেসব বিক্রেতা বা মার্চেন্টদের কাছ থেকে পণ্য নিতো তারাও সময়মতো তাদের বিক্রিত পণ্যের অর্থ পাননি। এসব ঘটনার পাশাপাশি এরপরের ঘটনাও মোটামুটি সবারই জানা।

 

গ্রাহকদের দায়ের করা প্রতারণা মামলায় ২০২১ সালের ১৬ই সেপ্টেম্বর গ্রেপ্তার হন ইভ্যালির সিইও মোহাম্মাদ রাসেল। দুই বছরেরও বেশি সময় পর সব মামলা জামিন পেয়ে গত ১৮ই ডিসেম্বর তিনি ছাড়া পান।

 

২০২১ সালে একই দিনে প্রতিষ্ঠানটির তখনকার চেয়ারম্যান ও রাসেলের স্ত্রী শামীমা নাসরিনও গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। তিনি অবশ্য আগেই জামিনে মুক্তি পেয়েছেন।

 

তারপা গ্রেপ্তার হওয়ার পর ইভ্যালির ব্যবস্থাপনার জন্য সাবেক বিচারপতি এএইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিককে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের একটি অন্তর্বর্তীকালীন বোর্ড গঠন করা হয়।

 

রাসেলকে গ্রেপ্তারের পর তখন বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ডিজিটাল ই-কমার্স পরিচালন সংক্রান্ত জাতীয় কমিটি জানিয়েছিল যে, গ্রাহক, মার্চেন্ট ও অন্যান্য সংস্থার কাছে ইভ্যালির দেনা মোট ৫৪৩ কোটি টাকা।

 

কারামুক্তির পর রাসেল ফিরে এসে আবারও শুরু করেছেন ইভ্যালির কার্যক্রম। তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন পর্যায়ক্রমে সবার বকেয়া পরিশোধ করবেন। রাসেলের দাবি, নিয়ম নীতি মেনে ঠিকমতো ব্যবসা চালাতে পারলে এই টাকা শোধ করতে খুব বেশী সময় তাদের প্রয়োজন হবে না।

 

গত ২৯ ডিসেম্বের “বিগ ব্যাং” অফার দিয়ে মূলত প্রতিষ্ঠানটি আবার ব্যবসায় ফিরল। ইভ্যালি “বিগ ব্যাং” অফারের একদিনেই আশি হাজার গ্রাহকের কাছ থেকে অর্ডার পেয়েছে তারা।

 

ইভ্যালির সিইও মোহাম্মাদ রাসেল ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি বাংলাকে জানান তিনি আর আগের পদ্ধতিতে ব্যবসা পরিচালনা করবেন না। এখন কারও কাছ থেকে কোনো অগ্রিম অর্থ নেওয়া হবে না।

 

রাসেল বিবিসিকে বলেন, “গ্রাহকের হাতে পণ্য পৌঁছানোর পর টাকা গ্রহণ করা হবে। আমাদের মাধ্যমে অর্ডার পেয়ে বিক্রেতারা কুরিয়ার কোম্পানিকে পণ্য বুঝিয়ে দিবেন। কুরিয়ার সরাসরি বিক্রেতাকে তার টাকা পরিশোধ করবে। কুরিয়ার চার্জের পার্ট হিসেবে ইভ্যালি কমিশন পাবে। বিক্রেতার মূল্যের সঙ্গে সামান্য প্রফিট রেখে পণ্য বিক্রি করব আমরা। সে কারণে ওই একই পণ্য বাজারের চেয়ে গ্রাহক আমাদের কাছে কম দামেই পাবে।”

 

ইভ্যালি আগে যেভাবে ভর্তুকি দিয়ে “অবিশ্বাস্য কম দাম” অফার দিত, সেটিও এখন থেকে আর দেওয়া হবে না। এছাড়া অগ্রিম টাকা নিয়ে অর্ডার করার পরও একজন গ্রাহকের আগে জানার সুযোগ ছিল না যে তিনি কবে সেই পণ্য পাবেন।

 

তবে এবার প্রতিষ্ঠানটি বলছে, গ্রাহক যেকোনো পণ্য অর্ডার দেওয়ার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ই-কুরিয়ারের মাধ্যমে পেয়ে যাবে এবং সব পণ্য সিওডিতে (ক্যাশ অন ডেলিভারি) পাওয়া যাবে।

 

রাসেলের ভাষ্য, এখন তাদের প্রধান কাজ হবে ব্যবসা সচল রেখে গ্রাহকদের আস্থা তৈরি করা।

 

তিনি বলেন, “মানুষ যেন স্বচ্ছন্দে সঠিক দামে সঠিক পণ্য সঠিক সময়ে পায় – সেটিই হবে আমাদের একমাত্র নীতি। আগে আগে ভর্তুকি দিয়ে পণ্য গ্রাহকদের দিতাম, সেটি আর করব না। আর প্রচার বা বিজ্ঞাপনে আমরা কোনো অর্থ ব্যয় করব না। বরং কেউ চাইলে আমাদের প্লাটফফর্মে বিজ্ঞাপন দিতে পারে। এটিই এখন আমাদের ব্যবসায়িক নীতি।”

 

বকেয়া কীভাবে শোধ হবে?

২০২১সালের সেপ্টেম্বরে রাসেল ও তার স্ত্রী প্রেপ্তার হওয়ার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছিল তখন পর্যন্ত গ্রাহকদের কাছে প্রতিষ্ঠানটির দেনা ৩১১ কোটি টাকা। আর মার্চেন্ট, অর্থাৎ যেসব প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে পণ্য নিয়ে সরবরাহ করার কথা তাদের কাছে দেনা ২০৫ কোটি টাকা।

 

রাসেল বিবিসিকে জানান, তাদের মোট দেনার পরিমাণ সাড়ে পাঁচশ কোটি টাকার মতো, যা পরিশোধের কার্যক্রম তারা শুরু করেছেন।

 

তিনি বলেন, “মুনাফা থেকেই আমরা দেনা শোধ করব। দেখুন একটি ক্যাম্পেইন থেকেই আমাদের সারা বছরের অপারেশনাল কস্ট উঠে এসেছে। আর বকেয়া শোধ এক ক্যাম্পেইন থেকেই আসছে। মুনাফা থেকে বকেয়া শোধ করব। শোধ না হওয়া পর্যন্ত আমরা উদ্যোক্তা বা পরিচালকরা কোনো টাকা নিব না।”

 

তবে দেনা কিছুটা শোধ হলেই ইভ্যালির কার্যক্রম সম্প্রসারণের জন্য বিনিয়োগকারীদের কাছে যাওয়ার পরিকল্পনাও করছে প্রতিষ্ঠানটি।

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *